10 August, 2011

মাহে রমজান

আজ ১০ রমজান। আজ মাহে রমজানের রহমত ভাগের শেষদিন। ৬২০ খৃষ্টাব্দের ১০ রমজান উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুব্রা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা মক্কা নগরে নিজ বাসগৃহে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ৫৯৫ খৃষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে ২৫ বছরের যুবক হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নামের সঙ্গে তাঁর শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। হযরত খাদীজাতুল কুবরা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা সেকালের শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ছিলেন। জানা যায়, তাঁর বাণিজ্যিক কারবার সুদূর চীন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। তিনি অত্যন্ত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি আল আমীন এবং আস সাদিক অর্থাৎ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী হিসেবে খ্যাত হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নামকে তাঁর কারবারে লাগালেন। তাঁর বিশাল বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে প্রিয় নবী সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নাম সিরিয়া, বসরা প্রভৃতি বড় বড় বাণিজ্য কেন্দ্রে গমন করেন এবং প্রচুর মুনাফা করে ফিরে আসেন।
বাণিজ্য হতে ফিরে আসার প্রায় তিন মাস পর হযরত খাদীজা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নামের সংগে শাদী প্রস্তাব পাঠালেন। এই প্রস্তাবে আবু তালিব সম্মতি দিলেন। শাদীর দিন ধার্য হলে নির্ধারিত দিনে হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়া সালস্নামের সঙ্গে বরযাত্রী হিসেবে হযরত খাদীজা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হার গৃহে গমন করলেন চাচা আবু তালিব, চাচা হযরত হামযা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হু এবং হাশেমী গোত্রের সকল নেতৃবৃন্দ। এই শাদী মজলিসে খুত্বা পাঠ করলেন আবু তালিব। খুতবায় আবু তালিব ভাতিজা হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নাম সম্পর্কে বলেন: তাঁর মতো উত্তম আখলাকের যুবক মক্কায় আর নেই, যদিও তিনি সম্পদশালী নন, ধন-সম্পদ তো অস্থায়ী বস্তু। তাঁর কাছে এমন স্থায়ী সম্পদ হচ্ছে যার তুলনা হয় না, আর সেই সম্পদ হলো তিনি আল-আমিন, আসসাদিক।
হযরত খাদীজা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আনহার গুণাবলী তুলে ধরেন ওরাকা বিন্ নওফেল। এই শাদীতে মোহর ছিলো পাঁচ দিরহাম।
হযরত খাদীজাতুল্ কুবরা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মহিলা ছিলেন। তাঁর পবিত্র ও অনুপম চরিত্রের জন্য মক্কাবাসী তাঁকে তাহিরা উপাধিতে ভূষিত করে। ৬১০ খৃষ্ঠাব্দের রমাদান মাসের শেষ ভাগের কোনো এক বেজোড় রাতে অধিকাংশের মতে ২৭ রমাদান রাতে হিরা গুহায় প্রথম ওহী প্রাপ্ত হয়ে প্রিয় নবী সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়া সালস্নাম কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে এসে হযরত খাদীজা (রাদি.) কে বললেন: আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। স্বামীর এত্ত হালত দেখে তিনি তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন। প্রিয় নবী সালস্নালস্নাহু ‘আলায়হি ওয়া সালস্নাম তখন হযরত খাদীজা (রাদি.)-কে বললেন: আমার দারুন ভয় হচ্ছে, আমি হয়তো শেষ হয়ে যাবো। এই বলে তিনি হেরা গুহায় যা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলেন। হযরত খাদীজা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা স্বামীকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন: আলস্নাহ্র কসম। তিনি আপনাকে অপদস্থ করবেন না, আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করেন, অসহায় ও দরিদ্রদেরকে সাহায্য করেন, মেহমানদের সেবা যতœ করেন, দুর্যোগগ্রস্তদের সাহায্য করেন।
হযরত খাদীজা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা সর্ব প্রথম ঈমান আনেন এবং ইসলামের খিদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। এই মহিয়সী নারীর গর্ভে তিন পুত্র ও চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সর্ব কনিষ্ঠ কন্যা হযরত ফাতিমা রাদিআলস্নাহু তা’আলা আন্হা জান্নাতের নারীগণের নেত্রী।
হযরত খাদীজা (রাদি.) ইন্তিকাল করলে তাঁকে কবরে নামান প্রিয়নবী (সা.)। বর্তমান লেখক তার স্ত্রীকে সাথে করে মক্কার জান্নাতুল মু’আলস্নাতে হযরত খাদীজা (রাদি.) ও তাঁর পুত্রদের মাযার শরীফ যিয়ারত করেছেন।

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ