পবিত্র রমজান মাসকে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর গ্রন্থাবলী নাযিলের জন্য পছন্দ করেছেন। তাই এ মাসের মর্যাদা আল্লাহর নিকট অনেক বেশী। বান্দার জন্য এ মাসে আল্লাহ্ বহুবিধ কল্যাণের দুয়ার খুলে দেন। মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, পৃথিবীতে তার জন্য সবচেয়ে বড় ও পরিপূর্ণ নেয়ামত কোনটি? সন্দেহ নাই যে, এতে মানুষেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু মুমিন এবং কুটিলতামুক্ত অন্তরের অধিকারী সত্যানুসন্ধানী যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এ জবাব আসবে যে, আমাদের জন্য একটি সুবিচারে পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এটিই পৃথিবীতে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত হতে পারে। এরপর যদি জানতে চাওয়া হয় যে, সেটি কোনটি? পৃথিবীর ১৫০ কোটি মুসলমানের সাথে সাথে বহু অমুসলিম মনীষীও নিদ্বির্ধায় স্বীকার করেছেন যে, সেটি একমাত্র আলকুরআন। এমনকি মুসলিম তর্কবাগিশগণ বহু চ্যালেঞ্জে কুরআনের পক্ষে বিজয় অর্জন করেছেন। সর্বোপরি আল্লাহর পক্ষ হতে যে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে, তখন থেকে নিয়ে এযাবৎ কাল পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত অবিশ্বাসীরা মিলেও তা গ্রহণ করতে পারেনি।
এই সেই কিতাব; আল কুরআন! এটি যাঁর পবিত্র বাণী সেই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَان
“রমাদান মাস; এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে।” [সূরা আল বাকারাহ্: ১৮৫]
ইবনে কাসীর এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, এ মাসেই আল্লাহ্ তা’আলা অন্যান্য আম্বীয়ায়ে কেরামের উপর গ্রন্থ অবতীর্ণ করেন। ইমাম আহমাদ বলেন: ….আবূ সাঈদ আমাদের নিকট এই হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর সহীফা রমজানের প্রথম রাতে, তাওরাত রমজানের ছয় তারিখে, ইঞ্জীল রমজানের তের তারিখে ও কুরআন রমজানের চব্বিশ তারিখে অবতীর্ণ হয়।” এছাড়াও জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত আছে যে, “যবূর রমজানের বার তারিখে ও ইঞ্জীল আঠারো তারিখে এবং অন্যগুলো পূর্বোক্ত তারিখে অবতীর্ণ হয়।”
ইবনে মারদুবিয়া বলেন: সহীফাসমূহ, তাওরাত, যবূর ও ইঞ্জীল সংশ্লিষ্ট নবীর উপর একবারেই নাযিল হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআন একবারে নাযিল হয়েছে পৃথিবীর আকাশের ‘বাইতুল ইয্যাত’-এ, এবং তা রমজানের লাইলাতুল কাদর-এ অবতীর্ণ হয়। যেমনটি আল্লাহ্ বলেন: إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ “আমি একে মহিমান্বিত রাতে অবতীর্ণ করেছি”। তারপর তা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে পৃথক পৃথক ভাবে নাযিল করা হয়। [ইবনে কাসীর: ১ম খণ্ড, পৃ: ৯৭-৯৮, ইফা প্রকাশন]
ওলামাগণের মতে, এ প্রক্রিয়ায় কুরআন নাযিল করা হয়েছে এজন্য যে, এর মাধ্যমে মানুষেরা তাদের জীবনের সাথে কুরআনের একটা সমন্বয় খুঁজে পাবে এবং এ কুরআন অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনার শিক্ষা নবীর কাছ থেকে হাতে কলমে শিখে নেবে।
সুবহান আল্লাহ্! আল কুরআন আমাদের জন্য এমন এক গ্রন্থ যা অন্যান্য সকল আসমানী কিতাবের সত্যতা প্রকাশ করে তার অনুসারীদের নিকট। এসব ঐতিহাসিক দলীল প্রমাণাদি এতই বলিষ্ঠ যে, পৃথিবীর আনাচে কানাচে আজোর এর চাক্ষুষ প্রমাণ বিদ্যমান। পরন্তু পৃথিবীর উন্নতির সাথে সাথে দিনে দিনে এসব প্রামাণ্য সত্যের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েই চলছে।
আমরা এখন সে মাস অতিক্রম করছি যে মাসে এই পরিপূর্ণ নেয়ামত পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আল্লাহ্ তা’আলা। সুতরাং এ মাস কুরআনের মাস, এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব এবং এ থেকে অফুরন্ত কল্যাণ লাভ করার জন্য আমাদেরকে কোমর বেঁধে ইবাদাতে লেগে পড়া উচিত।
01 September, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
ভর্তির আবেদন করার পদ্ধতি ও নিয়মাবলী: ১. ভর্তিচ্ছু প্রার্থীকে প্রথমে আবেদন ফি জমা ও ...
-
সরস, সবুজ ও সুফলা আমাদের এই বাংলাদেশের একটি জেলার নাম কুড়িগ্রাম, পশ্টিম বঙ্গের কোঁচবিহার ও আসামের মানিকারচর সংলগ্ন এই আমাদের জেলা বাংলাদেশের...
-
আডল্ফ হিটলার (জার্মান ভাষায়: Adolf Hitler) (২০শে এপ্রিল, ১৮৮৯ - ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫) অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ যিনি ন্যাশনাল সো...
No comments:
Post a Comment