08 June, 2012

নিজের বুদ্ধিমত্তায় পাচারকারীদের হাত থেকে মুক্তি পেলো রাজারহাটের কিশোরী পলি রানী

বুদ্ধিমত্তার কারনে পাচারকারীদের হাত থেকে রা পেল কিশোরী পলি রানী।সে নতুন ভাবে বাঁচতে চায়।পড়াশুনা করে মানুষ হতে চায়। ভুলে যেতে চায় পাচারকারীদের  অমানুষিক শারিরীর নির্যাতনের কথা। এই কথাগুলো বলে কেঁদে ফেললো কিশোরী পলি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার  পলিকে বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে শুক্রবার সকালে তার আত্মীয় স্বজনের সাথে ফিরে যায় রাজারহাটের আমতলী সোনাবর গ্রামের বাড়ীতে। পুরো গ্রামে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। কিশোরী পলিকে অপহরনের সাথে জরিত থাকার অভিযোগে পুলিশ ২জনকে গ্রেফতার করেছে ।  বাড়ি ফেরার আগে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে আসে আত্মীয়স্বজনদের সাথে। সেখানে বর্ণনা দেয় তার অপরহরণের।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সোনাবর আমতলী গ্রামের দিনমজুর ভবেন্দ্র রায়ের কন্যা পলি রানী (১৫)। ছোটবেলা থেকে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করছে সে।অধিকাংশ সময় পেট পুরে খেতে পারে না পলি এবং তার পরিবার । বাবা ভবেন্দ রায় প্রায় সময় কাজের সন্ধানে ঢাকা, চট্রগ্রাম চলে যান। মা দিপালী রানী মানুষের বাড়ীতে কাজ করে। সংসারের শত কষ্ঠেও পড়াশুনা বন্ধ করেনি পলি রানী। সাকোয়া দ্বিমুখী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী সে। প্রতিবেশী সহপাঠী সাথী তার আত্মীয়দের দ্বারা তাকে বিদেশে কাজের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে। এ নিয়ে সাথী  তাকে বিভিন্ন প্রকার প্রোলভন দেখাতো ।
সংসারের সচ্ছলতার কথা ভেবে সাথীর কথায় কাজে যেতে রাজী হয় কিশোরী পলি।আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত সোমবার স্কুলে যাবার কথা বলে সাথী পলিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সাথী তাকে প্রথমে টগরাইহাট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয় রাজারহাট নবগ্রামের যুবক নুর ইসলাম ও শাহাদত ।
এই যুবকদ্বয় পলিকে হত্যার হুমকী দেখিয়ে রংপুর হয়ে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকার  মিরপুরের একটি ১২তলা ভবনের একটি কে পলিকে আটকিয়ে রাখে।ঐ যুবকদ্বয় পলিকে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়।কিন্তু পলি রাজী না হওয়ায় সেখানে সাথীর উপস্থিতিতে অপহরণকারীরা পলির উপর মারধর সহ শারীরিক নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের এক সময় ঐ কিশোরীর আতœ চিৎকারে পার্শ্ববর্তী ফাটের লোকজন এগিয়ে আসলে ঐ যুবকরা পালিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে সাথী বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার নাম করে বুধবার ঢাকা থেকে আবারো গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী বাস ষ্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে আসে পলিকে।
সেখানে সাথী আগে থেকে ওৎপেতে থাকা একটি চক্রের হাতে পলিকে তুলে দেয়ার চেষ্টা করলে পলি কৌশলে পালিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী পলাশবাড়ী থানায় আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহরনকারী সাথীকে আটক করে।
বুধবার রাতেই এব্যাপারে রাজারহাট থানাকে অবহিত করলে বৃহস্পতিবার এসআই শাহজাদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম অপহৃত কিশোরী ও অপহরনকারীকে রাজারহাট থানায় নিয়ে আসে। নির্যাতনের শিকার কিশোরী শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় রাজারহাটথানা পুলিশ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।শুক্রবার সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পলির মা দিপালী রানী জানান সাথীর মা জোৎস্না বেগম পাচার কারী দলের সদস্য।তার নামে অনেক মামলা আছে।আমি জোৎস্না, মজিদুল,তালেব, নুরুর শাস্তি চাই। আমরা গরীব মানুষ  আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই।
চাকির পাশা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড়েও মেম্বার বিষাদ চন্দ্র রায় জানান জোৎস্না বেগম ও তার স্বামী আলতাফ হোসেন নারী পাচারকারী দলের সদস্য।তারা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। গরীব পলি রানীকে বাড়ীতে নিয়ে যাবার পর রাতে আবারও কোন ঘটনা ঘটায় এই আতংক কাজ করছে।
রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ছাদেকুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের সোনাবর (আমতলী) গ্রামের আলতাফ আলীর স্ত্রী জোসনা বেগম (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও নারী পাচারের কাজ করে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায়  ৪ জুন সোমবার জোসনা বেগমের মেয়ে সাথী বেগম (১৬) এর যোগসাজসে পার্শ্ববর্তী বাড়ির পলিকে প্রলোভন দেখিয়ে অপহরন করে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে পলি রানীর মা দিপালী রানী ওই দিন বিকেলে বাদী হয়ে রাজারহাট থানায় সাথী বেগম ,তার মা জোসনা বেগম  ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলমতি গ্রামের মাজেদুল ইসলাম (৩৫) কে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করেন।
বিষয়টি জানতে পেয়ে সু-চতুর জোসনা বেগম তড়িঘরি করে পলি রানীর স্বজন বিষ্ণুপদ রায় ও অজয় কুমার এর বিরুদ্ধে থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।
সোমবার রাজারহাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম অভিযোগ দুটি সরজমিন তদন্ত করতে গেলে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ জোসনাকে গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। নিরুপায় হয়ে থানা পুলিশ জোসনাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ